ratio and proportion
অনুপাত ও সমানুপাত কি ও এর সমস্ত নিয়ম সহজ ভাষায় বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে । অনুপাত ও সমানুপাত এর অংক গুলি বিভিন্ন উদ্যাহারনের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ।
এখানে আমরা যে যে বিষয় গুলো পড়িব তার তালিকা
আমরা অনেক সময় অনুপাত শব্দটি ব্যবহার করে থাকি ৷ যেমন জল ও চিনির অনুপাত ঠিক ঠিক ব্যবহার করবে তা না হলে সরবতে মিষ্টি কম বা বেশি হয়ে যাবে, এ ছাড়াও বালি ও সিমেন্টের অনুপাত, খাবারের রান্নার সময় নুন-হলুদ-লঙ্কার অনুপাত, কাপড় কাচতে গেলে জল ও সাবানের অনুপাত, দুধ ও জলের অনুপাত । প্রভৃতি কথা আমরা ব্যবহার করে থাকি । কিন্তু এই সব গুলি হলো আনুমানিক ভাবে ব্যবহার করা । কিন্তু অঙ্কের আমাদের যথাযথ ভাবে পরিমান সহকারে অর্থাৎ সংখ্যা দিয়ে ব্যবহার করতে হবে ।
ধরো আমি জমিতে চাষ করার জন্য এক ধরনের সার তৈরি করবো । তার জন্য নিলাম 3kg পটাশ ও 7kg গোবর সার । পটাশ ও গোবর সার মিশিয়ে আমার তৈরি সারের ওজন হল 10kg । এই সার ব্যবহার করে আমি জমিতে ভালো ফসল উৎপন্ন করলাম ।
আমার বন্ধু আমার ফসলের গুণমান বিচার করে বলে তাকেও(আমার বন্ধু) ঐ সার দিতে হবে । ধরি আমার জমি( ১ বিঘা জমির) আয়তনে যে পরিমাণ ছিল আমার বন্ধুর জমি আমার থেকে ৫ গুন বেশি আয়তন (অর্থাৎ ৫ বিঘা জমি) । আমার জমির জন্য 10 kg সার তৈরি করলে বন্ধুর জন্য তৈরি করতে হবে 10 গুনিত 5 সমান 50 kg মিশ্র সার । অর্থাৎ পটাশ লাগবে 3kg × 5kg =50 kg সার । গোবর সার লাগবে 7kg × 5kg=35kg । অর্থাৎ জমির আয়তন বাড়ল 5 গুন, গোবর সার এর পরিমান বাড়ল 5 গুন, পটাস এর পরিমান বাড়ল 5 গুন, মোট সার এর পরিমান বাড়ল 5 গুন । এই রকম ভাবে কারো জমির আয়তন যদি 2 গুন বাড়ে তা হলে আগের মতো সব ক্ষেত্রে আমাকে 2 গুণ করে বাড়াতে হবে । এই রকম ভাবে বৃদ্ধি করলে গুন ও কমলে ভাগ করতে হবে প্রতি ক্ষেত্রে ।
পাটাস : গোবর সার | 3:7 |
গোবর সার : পাটাস | 7:3 |
এখানে অনুপাতের কোনো একক ব্যবহার করা চলবে না । যেমন 3 kg : 7 kg =3:7 লিখেছি , একক বলতে কিলোগ্রাম , মিটার , লিটার , টাকা, প্রভৃতি কে বোঝায় । কেবল মাত্র সংখ্যা দিয়ে বোঝাতে হয় । সংখ্যা চলরাশি বা বাস্তব রাশি দুটোর মধ্যে একটি কিম্বা দুটোই হতে পারে অনুপাতের ক্ষেত্রে ।
কোনো একটি সরল অনুপাতে যে সংখ্যা দুটি থাকে তাদের প্রত্যেকটিকে অনুপাতের এক একটি পদ বলে । সরল অনুপাতের প্রথম পদটিকে বলে পূর্বপদ (Antecedent) এবং দ্বিতীয় পদটিকে বলে উত্তরপদ (Consequent) । যেমন 3:7 অনুপাতে 3 হল পূর্বপদ এবং 7 হল উত্তরপদ ।
অনুপাতের প্রতিটি পদকে একই সংখ্যা দিয়ে গুন বা ভাগ করিলে অনুপাতের মানের কোনো পরিবর্তন হয় না । অর্থাৎ পূর্ব পদকে যে সংখ্যা দিয়ে গুন বা ভাগ করিব উত্তর পদকে সেই সংখ্যা দিয়ে গুন বা ভাগ করিতে হবে, এতে অনুপাতের মানের কোনো পরিবর্তন হবে না ।
কোনো অনুপাতের পূর্বপদ ও উত্তরপদের স্থান বিনিময় করে য়ে অনুপাতের শৃষ্টি করে সেই অনুপাতকে বলে মুল অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত । যেমন মুল অনুপাত হল 3:7 ও মূল অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত হলো 7:3 ।
আমরা অনেক সময় দুই বা তার বেশি সরল অনুপাত নিয়ে অঙ্ক করে থাকি । দুই বা তার বেশি সরল অনুপাতের পূর্বপদ গুলিকে গুন করে গুনফলকে পূর্বপদ ও উত্তরপদ গুলিকে গুন করে উত্তরপদ নির্নয় করে নতুন অনুপাত তৈরি করা হয় । সেই নতুন অনুপাতকে বলা হয় মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত ।
একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করিলাম :- 2:3, 5:7, 3:5 এই সরল অনুপাত তিনটির পূর্বপদ গুলির গুণফল হলো 2 × 5 × 3 = 30 । আর এই সরল অনুপাত তিনটির উত্তরপদ গুলির গুণফল হলো 3 × 7 × 5 = 105 । এখন নতুন অনুপাত হলো বা মিশ্র বা যৌগিক অনুপাত 30: 105 ও এর লঘিষ্ঠ রূপ হলো 2:7 । আমি এখানে উভয় পদকে 15 দিয়ে ভাগ করেছি, 30 ÷ 15 : 105 ÷ 15 = 2:7 । কারন আমরা জানি যে কোনো অনুপাতের পদ গুলিকে একই সংখ্যা দিয়ে ভাগ বা গুন করাযায় ।
আমি যে আগে সারের কথা উল্লেখ করেছি তা কেবল মাত্র দুটি ওজনের অনুপাত । কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুই এর অধিক উপাদান নিয়ে তৈরি করিতে হয় । যেমন 3kg পটাশ, 7kg গোবর সার, 6kg ইউরিয়া ও 4kg দশ- ছাব্বিশ । এখানে আমি অনুপাত হিসেবে লিখিব :-
পাটাস : গোবর সার : ইউরিয়া : দশ- ছাব্বিশ | 3:7:6:4 |
গোবর সার : পাটাস : ইউরিয়া : দশ- ছাব্বিশ | 7:3:6:4 |
ইউরিয়া : দশ- ছাব্বিশ : গোবর সার : পাটাস | 6:4:7:3 |
ইউরিয়া : গোবর সার : দশ- ছাব্বিশ : পাটাস | 6:7:4:3 |
এই রকম ভাবে আমি আরা লিখতে পারি |
আমরা করবো :- \(\frac{A}{B}\times\frac{B}{C}\times\frac{C}{D}\times\frac{D}{E}\) এখানে প্রতিটি অনুপাতকে প্রথমে ভগ্নাংশ আকারে লিখে নিলাম ও তারপর গুন করে কাটাকাটি করে নিলাম, তারপর যে উত্তর বেরোবে তা হলো A:E এর মান ।
অতএব আমরা এখানে A,B,C,D,E এর মান গুলো বসিয়ে এই রকম ভাবে লিখবো \(\frac{3}{7}\times\frac{2}{5}\times\frac{5}{3}\times\frac{3}{5}\) । এখানে প্রতিটি ভগ্নাংশের প্রতিটি লবকে গুন করে নিলাম, উত্তর হবে \(3\times2\times5\times3\)=90 । আবার প্রতিটি ভগ্নাংশের প্রতিটি হরকে গুণ করে নিলাম, উত্তর হবে \(7\times5\times3\times5\)=525 । তা হলে গুন করার পর আমার নতুন অনুপাত হবে 90:525 । এরপর এই নতুন অনুপাতকে লঘিষ্ঠ আকারে পরিণত করলে হবে 6:35 । অতএব উত্তর হবে A:E=6:35 ।
এতক্ষন আমি বোঝানোর জন্য উপরের এই পদ্ধতি অবলম্বন করিলাম । কিন্তু পরীক্ষার সময় আমি এই রকম ভাবে করবো \(\frac{3}{7}\times\frac{2}{5}\times\frac{5}{3}\times\frac{3}{5}\) = \(\frac{2\times3}{7\times5}\) = \(\frac{6}{35}\) । অতএব আমার অনুপাত হবে 6:35 । কত সহজেই হয়ে গেল সমাধান । এখানে 3 লব ও 3 হর কে করেছি কাটা কাটি করার জন্য মানে ভাগ করার জন্য । আর 5 লব ও 5 হর কে করেছি ভাগ করার জন্য । তার পর 2 ও 3 এর গুন করে গুণফল 6 হল, আর 7 ও 5 এর গুণ করে গুণফল 35 হল ।
একটি সংখ্যা হবে:- \(\frac{pa}{p+q}\) ও অপর সংখ্যা হবে:- \(\frac{qa}{p+q}\) । যোগ করার সময় সংখ্যা বড় ছোট দেখা হয় না ।
(i)আগের মতো হবে, তবে তিনটি অনুপাতের যোগফল হরে হবে আর তিনবার একটি একটি করে অনুপাতের পদ গুলির সঙ্গে অঙ্কে দেওয়া যোগফল গুন করতে হবে । \(\frac{pa}{p+q+r}\) , \(\frac{qa}{p+q+r}\) আর \(\frac{ra}{p+q+r}\)
(ii)অন্যভাবে বলা যায় অনুপাত এর পদগুলির যোগফল বের করে \(\left( p+q+r\right)\) সেই যোগফল দিয়ে অঙ্কে দেওয়া যোগফলের সঙ্গে প্রথমে ভাগ করে \(\frac{a}{p+q+r}\) সেই ভাগফলের সঙ্গে অনুপাতের একটি পাদ গুন করে সেই স্থানের নাম্বার পাওয়া যাবে । উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি :-প্রথম স্থানের নাম্বার \(\frac{a}{p+q+r}\times p\), দ্বিতীয় স্থানের নাম্বার \(\frac{a}{p+q+r}\times q\), তৃতীয় স্থানের নাম্বার \(\frac{a}{p+q+r}\times r\)
এখানে একটি সংখ্যা বড় ও অপরটি ছোট হবে । তাই অনুপাতের পদগুলির যেটি বড় সংখ্যা সেটি হবে বড় আর অপরটি হবে ছোটো । এখানে p ও q এর মধ্যে p বড় হলে আমাকে বড় সংখ্যা বের করতে হলে এই সুত্র \(\frac{pa}{p-q}\), ছোটো সংখ্যা বের করতে হলে \(\frac{qa}{p-q}\), অর্থাৎ p > q ।
আর যদি q বড় হয় তা হলে হবে এই সুত্র \(\frac{pa}{q-p}\), ছোটো সংখ্যা বের করতে হলে \(\frac{qa}{q-p}\), অর্থাৎ q > p ।
সংখ্যা দুটির অনুপাত হবে x+y:x-y
এখানে অঙ্ক দেওয়া যোগফলের সঙ্গে অঙ্ক দেওয়া বিয়োগফল দুটোয় যোগ করিলে অনুপাতের একটি পদ ও অঙ্ক দেওয়া যোগফলের সঙ্গে, অঙ্ক দেওয়া বিয়োগফল দুটোয় বিয়োগ করিলে অনুপাতের অন্য একটি পদ পাওয়া যাবে ।
সংখ্যা দুটির গুণফল হবে :- \(\left(p\times q\right)\times\left( \frac{a}{p-q}\right)^{2}\) p > q ।বা q স্থানের অঙ্ক বড় হলে হবে \(\left(p\times q\right)\times\left( \frac{a}{q-p}\right)^{2}\) q > p ।
এখানেও অনুপাতের পদ দুটির যে পদটি বড় তার থেকে ছোট পদ টি বিয়োগ করতে হবে ।
যদি p বড় হয় তবে দুটি সংখ্যার যোগফল হবে \(\left(\frac{p+q}{p-q}\right)\times a\) অর্থাৎ p > q, আর যদি q বড় হয় তবে দুটি সংখ্যার যোগফল হবে \(\left(\frac{p+q}{q-p}\right)\times a\) অর্থাৎ q > p
অনেক সময় টাকার বা মুদ্রার অঙ্ক অনুপাতের সাহায্যে করতে হয় । এখানে মুদ্রার সংখ্যা দেওয়া থাকলে মুদ্রাগুলির মূল্য সমষ্টি , আর মূল্য সমষ্টি দেওয়া থাকলে মুদ্রাগুলির সংখ্যা বের করতে হবে ।
NO 1:- সমসংখ্যক মুদ্রা থাকলে প্রত্যেক মুদ্রার সংখ্যা বের করতে হলে আমাকে করিতে হবে এই সূত্র । মোট টাকা ভাজিত মুদ্রাগুলির মূল্য সমষ্টি, মোট টাকা \(\div\) মুদ্রাগুলির মূল্য সমষ্টি
NO 2:-মুদ্রা গুলোর অনুপাত দেওয়া থাকবে ও আমাকে মোট মুদ্রার সংখ্যা বের করতে হলে আমাকে এই সূত্র প্রয়োগ করতে হবে । মোট টাকা ভাজিত মুদ্রাগুলির মূল্য সমষ্টি গুনিত অনুপাতের সমষ্টি , মোট টাকা \(\div\) মুদ্রাগুলির মূল্য সমষ্টি \(\times\) অনুপাতের সমষ্টি
NO 3:- মুদ্রা গুলোর মূল্য সমষ্টি বের করতে হলে আমাকে এই সূত্র প্রয়োগ করতে হবে । মুদ্রার সংখ্যা ভাজিত অনুপাতের সমষ্টি গুণিত মুদ্রার মূল্য, মুদ্রার সংখ্যা \(\div\) অনুপাতের সমষ্টি \(\times\) মুদ্রার মূল্য
Disclaimer এর পেজটি অবশ্যই পড়বে